পুলিশের মামা
শুভজিৎ বন্দোপাধ্যায়
আমার বাবা ছিলেন পুলিশের মামা।
স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশের মা যখন তাঁর ভাই এর কাছে আসতেন তখন কথাবার্তা র ফাঁকে মা সুলভ উদ্বেগের বহিঃ প্রকাশ টা বারেবারেই হতো।
আমার বাবা তার স্নেহের ছোটবোন কে অভয় দিয়ে বলতেন ” এত দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে।
সবাই যদি দশটা পাঁচটা র কেরানী হবে তো এই সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলো চলবে কি ভাবে?”
আমার জীবনেও একবার সুযোগ এসেছিল এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে।
ভবানীভবনের ভেতরের মাঠে সকাল সাড়ে সাতটায় হাজির হলাম। কয়েকশো ছেলেপিলে।
জল, টিফিন কিছু নেই।
ডাক এলো দুপুর দেড়টার দিকে।
উলঙ্গ করে মেডিকেল পরীক্ষা ও হয়ে গেল।
তার পর ওজনে সাড়ে সাতচল্লিশ কিলো!!
মিনিমাম পঞ্চাশ কিলো হতে হবে।
হল না।
শুকনো দেহ মন নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
বুঝলাম পুলিশের চাকরি পাওয়া টা অতো সহজ কাজ নয়।
কর্মজীবনের প্রভাব দৈনন্দিন জীবনে ছাপ ফেলে এটাই স্বাভাবিক।
পুলিশ বাড়িতেও পুলিশ গিরি করে।
উকিল তার কাছের লোকজন দের ও মক্কেল ভাবে।
আর মাষ্টারমশাই, দিদিমনি দের কাছে তো কোন কথাই চলবে না।
কথায় কথায় লাল কালি।
কিন্তু সবাই তো আর একরকম হবে না।
মামার ভাগ্নেটি কে টিভির পর্দায় কখনো কখনো মূখ্যমন্ত্রী র পিছনেও দেখা যেতো।
সেই দেখে আমাদের কি উচ্ছাস!!
আবেগপ্রবণ মামার চোখের কোণে জল।
হুস করে সেই দিন গুলো ফুরিয়ে গেল!!
উদ্বেগের তিনটে দশক অতিক্রম করে তাদের স্নেহের ছেলেটি আজ হাসতে হাসতে মহান কর্মজীবনের অন্তিম লগ্নে শেষ পুলিশ দিবসের শুভেচ্ছা গ্রহণে ব্যস্ত।
হাসিখুশি মন দুঃখ প্রকাশ জানে না, মানে না।
একটা কর্মজীবনের শেষ মানেই আরও একটা, আরও নতুন কিছু, নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন, চ্যলেন্জ তার সামনে।
আমজনতার শুভেচ্ছা ভালোবাসা পাথেয় করে ই তার ছুটে চলা ঐরাবতের গতিতে।
চরৈবেতী। চরৈবেতী