আমাদের দুলাল স্যার
শুভজিৎ বন্দোপাধ্যায়
দুলাল স্যারের শাসন মানেই পিঠের উপর চাপড়।
আঘাত কম আওয়াজ বেশী। গলার আওয়াজ আরও বেশী।
অধিকাংশ ছাত্র এবং তাদের বাবা, কাকা,জ্যাঠাকেও চিনতেন আর ভয় দেখাতেন বাড়িতে জানিয়ে দেওয়ার।
মহেশতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাঙলার মাস্টার মশাই।
বাঙলার প্রথম পত্রের খাতা দেখতেন।
নম্বরের ব্যাপারে ভয়ঙ্কর রকমের কৃপন।
বলতেন টেস্ট পরীক্ষায় আমার কাছে পাশ করতে পারলে মাধ্যমিকে পন্চাশ নম্বর হয়ে যাবে।
লম্বা, ফর্সা সুদর্শন মানুষ এবং তার চেয়েও বেশি সুন্দর তাঁর হাঁসি।
আমার বাবার প্রতি তাঁর বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছিল। একাধিকবার বলতেন,
“বাংলা ব্যাকরণ টা তোমার বাবার কাছে ভালো করে শিখতে চেষ্টা করো। সনৎদার মতো শিক্ষকের কাছে আমরাও শিখেছি”।
চাকরি করতে এসে শিখেছি সহকর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতার মোড়কে প্রতিযোগিতা।
কিন্তু এই সমস্ত শিক্ষক মশাইরা অবলীলায় পরস্পরের প্রশ্ঙসা করতেন।
অসম্ভব সুন্দর হাতের লেখা ছিল দুলাল স্যারের।
স্কুলের শিক্ষক মশাই দের অবসরকালীন মানপত্র থেকে শুরু করে স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় হবার পুরস্কার বিতরণ,স্পোট্স এ ফাস্ট, সেকেন্ড হওয়ার মানপত্র, সবেতেই স্যারের মুক্তোর মত ঝকঝকে হাতের লেখা!!
শেষ বার বাড়িতে এসেছিলেন বাবা মারা যাওয়ার পর।
মাঝেমধ্যে দেখা হতো… আর হবে না।
গতকাল ৭.১২.২০ তারিখে করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি চির বিদায় নিলেন।
করোনা আমাদের এতটাই বদলে দিয়েছে যে আমরা এখন সহজেই মেনে নিয়েছি এই নিউ লর্ম্যালের”করোনা বিদায়” প্রথাকে।
কেউ নেই.. কিছু নেই.. কেবলমাত্র একটা প্লাস্টিক মোড়কে শেষ বিদায় আমাদের আদর্শ, আমাদের
আবেগ আমাদের ভালোবাসার মানুষজনকে।
হে আধুনিক সমাজব্যবস্থা, হে আমাদের বিজ্ঞান,
আজ তুমি এ কি শিক্ষা দিলে!!
“করোনা” নামক একটা অদ্ভুত শব্দের মাধ্যমে অসুস্থ করে পঙ্গু করে দিলে আমাদের এতদিনের সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা! শেষ বিদায়ের প্রথাপদ্ধতি।
স্যার, আপনি অমৃত লোকে গর্জে উঠুন এই অব্যবস্থার বিরুদ্ধে-যেমন টা লড়াই চালিয়ে গেছেন সারাটা জীবন অন্যায় আর মিথ্যার
বিরূদ্ধে ছাত্র এবং সমাজের মঙ্গলের জন্য।
ধন্যবাদ জানবার স্পর্ধা নেই ۔শুধু বলি কলম তুমি দীর্ঘজীবী ۔
বেশ বলেছ।
বেশ বলছো যাকে ধনঞ্জয় বলে তাকে
সেটা তো বললেই হয় কত্তা