Amar baba

আমার বাবা | Amar Baba

      আমার বাবা
শুভজিৎ বন্দোপাধ্যায়

দশ বছর হলো বাবাকে হারিয়েছি…
কিন্তু এখনও তাঁর অভাব হারালো না আমার প্রতিদিনের জীবন থেকে।
এই যে লকডাউন, এই যে অতিমারী , মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার পরীক্ষা প্রতিদিন.. প্রতিমূহুর্তে, এই সময় বাবা যদি আমার পাশে থাকতেন!!
“কিচ্ছু ভেবোনা সব ঠিক হয়ে যাবে।”
কিম্বা ” সত্যেরে লও সহজে”।
বাবার জীবন ছিল রবি র আলোয় উদ্ভাসিত।
বাবা বলতেন ” একটা মানুষ সারা জীবনে যা লিখে গেছেন, তা সারাজীবনে পড়ে শেষ করা সম্ভব নয়।”
সবসময় হরিনাম জপ করার মতো ই তাঁর মুখে লেগে থাকতো রবীন্দ্রসংগীত বা কবিতার টুকরো।
দেবতার গ্রাসের মতো বড়ো কবিতা অনায়াসে বলে যেতেন আবার কাঁদতেন ও কবিতা বলতে বলতে।
উত্তমকুমার সিনেমা ছিল খুব পছন্দ।
সেখানেও আবেগের মুহূর্তে কান্নাকাটি করতেন মেয়েদের মত।
“মন্দিরের ভীড়ে আমার কোনো ভক্তি আসে না, বিরক্তি আসে। সাধনা সবসময় বনে-মনে আর কোনে”
এই ছিল তাঁর ঈশ্বর চিন্তা।
কেবল রাতে শোবার সময় প্রায় দু মিনিট মাথার উপর হাত জোড় করে ঠাকুর প্রনাম করতেন নিয়মিত।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সাদা ধুতি / পাজামা আর পাঞ্জাবি ই ছিল তাঁর পছন্দের একমাত্র পোশাক।
নিজের হাতে ইস্ত্রী করে রাখতেন।
পাতে খাবার নষ্ট করা, অকারণ মানুষ কে ফাই ফরমাস করা এবং সময়ের কাজ সময়ে না করা ওনার অত্যান্ত অপছন্দ ছিল। আর ছিল ভাষায় সংযম। কখনোই রেগে গিয়ে অসাংবিধানিক শব্দ ব্যবহার করতেন না। বলতেন শব্দ ব্রহ্ম।
সংসারে শেষ দিন পর্যন্ত উনিই ছিলেন কর্তা আর আমি কর্ম। নির্দেশ, পরিকল্পনা ওনার, হাতে পায়ে কাজকর্ম করতাম আমি।
এখনো সেই অভ্যাস টা গেল না!!
বয়স বেড়ে গেল.. সময় চলে গেল…
কিন্তু এখনও এই হারিয়ে যাওয়া টা সহজ ভাবে নিতে পারলাম না।
অভাব.. শূন্যতা রয়েই গেল!!