pishimoni

আমার ছোট পিসিমনি | Amar choto Pishimoni

আমার ছোট পিসিমনি

শুভজিৎ বন্দোপাধ্যায়।
“কাল যা ছিল শোক, আজ তা হয়েছে স্মৃতি”।
পিসিমনির চলে যাওয়ার আরো একটা বছর পার।
জোয়ারের জল নেমে গেলেও নদীর আসপাশের গাছের পাতা গুলো ভিজে থাকে আরো কিছুক্ষন। ঠিক তেমনি কোন কোন মনের ভিতর পিসিমনির ভাঁটা র টান টা এখন ও ভিজে রয়েগেছে, রয়ে যাবে তার আন্তরিকতার জন্য।
অসাধারণ উপস্থিত বুদ্ধি।
হাঁসির মধ্যে দিয়ে নিজের ব্যক্তিত্বর ঝলকানি ফুটিয়ে তোলার কায়দা, যা শুধু মাত্র আত্মবিশ্বাসী হৃদয়ের দ্বারাই সম্ভব।
একটা অনুকরনীয় জীবনযাত্রা।
“কেন মেঘ আসে হৃদয় আকাশে…”
জানিনা কেন!!
কোন কিছু আকড়ে ধরতে গেলেই পিছলে যাওয়া…সরে যাওয়া আড়ালে..
এই হারিয়ে খোঁজাই বোধহয় জীবন।
পিসিমনির নাতনি ডোরেমীর অনুরোধ। তাই এই পুরানো লেখাটা আরও একবার খুঁজে আনলাম।
এভাবেই স্মরণ করলাম, খুঁজলাম আমার পিসিমনিকে, আমার ছিড়ে যাওয়া শিকড়ের টানে…*************** *****
কানসবহাল।

উড়িষ্যার এক অখ্যাত যায়গায় কর্মসুত্রে চৌদ্দ বছর কাটিয়ে ছিলাম। আমার পুরনো কিছু জিনিসের সাথে এখনো মিলে মিশে আছে কাসবহালের স্মৃতি।
আমার ছোটো পিসি ছোট ছোট জ‍্যামের শিশিতে ভরে আমলকি, কুলের আচার, তেতুলের আচার, কখনও বা বড়ি ইত্যাদি আমার মা বাবা ‘র মারফত্ আমাকে পাঠাতেন।
আমার মা’ও নারকেল নাড়ু, নিমকি, পোস্ত ভেজে গুড়িয়ে পাঠাতেন আমাকে।
এগুলো খাওয়া র সময় আমার চোখ জলে ভিজে যেত।
মানুষের ভালোবাসার পরিচয় তার কাজের মধ্যে।
মুখে বলা মুর্খতা।
আমার প্রতিটি ভালোবাসার মানুষেরা প্রতিদিনের কাজের মধ্যে ,ব‍্যবহারের মধ্যে তাদের অপরিসীম ভালোবাসার নিদর্শন রেখে গেছেন। এখনও সেই সব নিদর্শন ফুল হয়ে ফোটে, ফল হয়ে ঝরে পড়ে নিশুতি রাতে জ‍্যোৎস্না ভেজা আঙিনায়।
বজবজের বাড়ী থেকে বের হবার সময় দরজা র মাথায় কাঠের পাটাতনের উপর রাখা ছোট্ট কৌটো থেকে বের করে পিসি আমার হাতে দিত দু টুকরো আমলকি। তার পর রোগা নীল শিরা বার করা শাখা,পলা ও একটি সোনার চুড়ি পরা হাতে মাথায় জপ করে দিত, তার পর “দুগ্গা দুগ্গা।”
পরবর্তী সময়ে যখন হাত আর এগিয়ে আসতে পারত না তখন মাথাকে’ই এগিয়ে যেতে হতো হাতের তলায়।
শীতের দুপুরে হয়তো একটু মানকচু বা নারকেল একটা নিয়ে হঠাৎই হাজির হলাম বজবজে। দেখতাম রোদে বসে পিসেমশাই বই পড়ে শোনাচ্ছেন পিসিমনিকে।
কি অদ্ভূত ভালোবাসার বন্ধন!!
কে বলে ভালোবাসা কেবলই অল্প বয়সের উচ্ছ্বাস!!
“তোকে কি খেতে দিই বলতো”!!
পিসেমশাই সদাব‍্যস্ত “শরতের মিছা মেঘ হাক ডাক সার”।
পিসিমনি কেবল নেত্রী সুলভ ভঙ্গিতে হাত তুলে মাথা নাড়িয়ে বলল “দাঁড়াও আমি দেখেছি”।
একটু পরেই চলে এল একটুকরো পমপ্লেটের ল‍্যাজ।
ঠিক এটাই আমার মনবাসনা। কিন্তু কি করে বুঝতে পারলো!!
অসম্ভব সুন্দর আমার পিসির মাছ রান্না। অমৃত!!
“খোকার জন্য করে রাখতে হয়। হঠাৎ কখন এসে হাজির হয়”।
এই মাথা আর হাতের জাদুই খোকা আর মম এর মতো অনেককেই ছুটিয়ে আনতো বজবজের বাড়িতে।
খোকা আর মম ও কিন্তু শেষ দিন পর্যন্ত দু হাতে টেনে রেখেছিল আমার বাবার অত্যন্ত স্নেহের,
সে আমার ছোট বোন,”খুকু” কে।
এমনই এক শ্রাবণের ভিজে সকালে একটু একটু করে সেই মায়ার বন্ধন ছিন্নহয়ে গিয়েছিল!!!
পিসেমশাই এর একান্ত নিজস্ব “কোনে” আজ আর পৃথিবীর কোনো কোনেই নেই।
আদরের মামমামে’র লাল কালো চাদরটা সযত্নে নিজের কাছে নিয়েছে নাতনি। সনু বলে সরুগলায় ডাক দেবে না কেউ!!
কেউ ফুল দিয়ে, কেউ ধূপ দিয়ে, কেউ গানে কেউ বা মনে স্মরণ করেন প্রিয় জনের চলে যাওয়া। কেউ বা বাইরের আস্থিরতায় বুঝিয়ে দেয় ভীতরের কম্পনের মাত্রা রিখটার স্কেলে কত….
ভালো ভাষাই আমার ভালোবাসা।
এ কথা শেষ হবার নয়।এই স্মৃতি ভোলবার নয়। এই চোখের জল কষ্টের নয়।জীবনের সব অনুভূতি নষ্ট হবার নয়। চুপ থাকা মানে সব ভুলে থাকা নয়।
আনন্দ শুধু আনন্দ।
ভাবতে ভালোই লাগে যে আমার মাথায় রাখার মতো হাত একটি একটি করে হারিয়ে যাচ্ছে।
আমি অনন্ত স্বাধীনতার অপার সমুদ্রের দিকে ছুটে চলেছি দারুণ এক সর্বহারার অনুভূতি কে সম্বল করে।
https://kobita-o-galpo.blogspot.com

2 thoughts on “আমার ছোট পিসিমনি | Amar choto Pishimoni”

Comments are closed.