মুঠোয় ধরা মুঠোফোন
শুভজিৎ বন্দোপাধ্যায়
পিসেমশাই এখন নব্বই এর নবীন।
কারণ টা যাই হোক না কেন,
করোনার বাহানায় অনেক দিন আর বজবজ বাড়ির ধার মাড়াই না।
কিন্তু ফোনালাপ আমার আর পিসেমশাইয়ের চলতেই থাকে।
সময় সুযোগ মত ফোন করি।
পিসেমশাই মোবাইলে ঠিক অভ্যস্ত নন।
ঠিক মতো কানে দিয়ে শুনতে ও পান না। কেবল ই হাঁ হাঁ করতে থাকেন।
মনে হয় পুরানো আমলের কেবলমাত্র কথাবলার টেলিফোন টাই ভালো ছিল, অন্তত এই সব লাফিয়ে আধুনিক না হওয়া, জীবনের শেষ ধাপে আসা মানুষদের জন্য।
পিসেমশাই অনেক অনেক কথা বলতে চান।
শুনতে চান রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ।
কিন্তু কিছুতেই ঠিক ঠাক শোনা যায় না।
দোষ কি শুধুই বয়সের? অভ্যাসের? শ্রাবন শক্তির?
কোন ই ভুল নেই এই আধুনিক মুঠোফোন গুলোর?
একজন বয়স্ক মানুষ,অনভ্যস্ত মানুষ কি করে বুঝবেন এই সব মোবাইলে কোথায় কথা বলতে হবে আর কোথায় ই বা কান পেতে শুনতে হবে?
সব ই তো একরকম। উত্তর দক্ষিণ বোঝা যায় না।
এর ই মাঝে কথা বলার ফাঁকে হঠাৎ ই হয়তো নেটওয়ার্কের মর্জিমাফিক কল ড্রপ হয়ে গেল।
কিন্তু পিসেমশাই কিছু না বুঝে, কোন সিগনাল না পেয়ে কথা বলতেই থাকলেন আর ও কিছু টা সময়।
অবশেষে যখন বুঝলেন শ্রোতা নেই, অভিমান করলেন এই ভেবে যে আমি ইচ্ছে করেই তাঁর ফোন টা হয়তো কেটে দিলাম!
আধুনিক যুগের এই মুঠোফোনের সবটুকু ই যেন রহস্যময়। বিজ্ঞ আর বুদ্ধিমান ছাড়া বাকিদের জন্য নয়।
Cost effective design আর look এর মায়াজালে মুঠোফোন যেন সকলের মুঠোয় ধরা দিতে রাজি না।
অসুস্থ মানুষ,অশক্ত মানুষের জন্য তো একদমই না।
বয়স বড় বালাই!
যত ই বলি না কেন বয়স তো শুধু number.
তবু সবাই কৌশলে বয়স্কদের এড়িয়ে চলে।
এমন কি এই অত্যাধুনিক মোবাইল ও!
মুঠোয় ধরা দিয়েও অধরা ই রয়ে যায় অনেকের মনের কাছ থেকে।
কালো রঙের হাতল ওলা ক্রিঙ ক্রিঙ করে ঘর কাঁপানো পুরনো দিনের সেই হারানো টেলিফোন এখনও মনের মধ্যে অনেক টা জায়গা জুড়ে রয়ে গেছে।
মুঠোয় বন্দী না হয়েও!