Headstand

হেঁট মুন্ড উর্ধপদ | Headstand

হেঁট মুন্ড উর্ধপদ
শুভজিৎ বন্দোপাধ্যায়

অনেকদিন আগে শারদীয়া দেশ পত্রিকায় সন্জীব চট্টপাধ্যায়ের লেখা “হেঁট মুন্ড উর্ধপদ” উপন্যাস টা পড়েছিলাম।
উপন্যাসের বিষয় টা নয়, নামকরণ টা এখনও ভুলতে পারিনি।
কোন মহাপুরুষের জন্মদিন এলেই আমার অবচেতন মনের গভীরে থাকা এই শব্দ গুচ্ছ মনের মধ্যে ভেসে ওঠে।

আমি নেতাজীর, বিবেকানন্দের কিম্বা কবিগুরুর ছবির সামনে অথবা মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করি, আমি যেন সত্যি ই মাথাটা মাটিতে ঠেকিয়ে আর পা দুটো উপরে তুলে শীর্ষাসনের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছি।

লজ্জা লাগে আমি পারিনা। পারিনি।

ঐ আদর্শ অনুসরণের বিন্দুমাত্র চেষ্টা আন্তরিক ভাবে কোনোদিন ই করিনি।
বুদ্ধি বিবেচনা পাকা হবার আগে যেটুকু করেছি তা কেবলমাত্র মুখস্থ করে উগরে দেওয়া, তা সে পরীক্ষার খাতায় হোক বা কোন বিতর্ক প্রতিযোগিতায়।
পরবর্তীতে কিছু মুখোস্থ করা উদ্ধৃতি দিয়ে বন্ধু মহলে নিজের গুরুত্ব বাড়ানোর অনাবশ্যক চেষ্টা করেছি।

কেবলমাত্র একটা কথা ” ওঠ, জাগো,নিজ লক্ষ্যে উপনীত হও”
এই কথা লক্ষ্যবার বলেগিয়েছি কিন্তু আজ ও আমার লক্ষ্য স্থির করে উঠতে পারিনি।
অথচ প্রতিদিন সকালে ই উঠছি, জাগছি, দৌড়োচ্ছি কিন্তু নিজের লক্ষ্য স্থির না করতে পেরে অন্যের লক্ষ্য পূরণের জন্য ছুটে চলেছি।
এটা হতাশার কথা নয়, ব্যর্থতার কথা।

আমার মার্গদর্শন সঠিক না হওয়ায় সারা জীবন গোলকধাঁধায় ঘুরে যাচ্ছি আর বছরের এই সব বিশেষ দিন গুলো তে মহাপুরুষ দের একটা পেন্নাম ঠুকে,আর কপি/পেষ্ট করে “মহান” কর্তব্য সাধন করছি বলে ভাবছি।

নিজেই নিজেকে ঠকিয়ে গেলাম সারাজীবন অথচ বুঝতে এবং মানতে পারলাম না।
আমি অধম থেকে ধীরে ধীরে কখন যে নরাধম হয়ে গিয়েছি নিজেই জানিনা।
এত সব মহাপুরুষের পূন্যভূমিতে জন্ম নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল, হয়তো এটা আমার পূর্ব পুরুষদের সুকর্মের ফল কিন্তু আমি সেই সৌভাগ্য বজায় রাখতে পারিনি।
নিজের আত্মিক উন্নয়ন ঘটাতে পারিনি।

আমার অবশিষ্ট জীবন টা এমন ভাবে হেঁট মুন্ড উর্ধপদ হয়েই কেটে যাবে।
ধুপ আর মালার গন্ধ মূর্তির চাকচিক্য ই ভুলিয়ে রাখবে আমাকে।

প্রভু এ তোমার কেমন লীলা!!