Jajaup Jenna

জেজাউপ্ আর জেন্না । Jajaup aar jenna

জেজাউপ্ আর জেন্না।
শুভজিৎ বন্দোপাধ্যায়

জেজাউপ্ আর জেন্না।
কোন ভাষা কোন অভিধানে এই শব্দের অর্থ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
অনেক ছোট বয়স থেকে আমাদের জ্যেঠামশাই আর জ্যেঠিমা কে এই নামেই আমরা ডাকতাম।
এই নাম গুলোর স্রষ্টা কিন্তু আমার দাদা ।

ছোটবেলার থেকেই শান্ত স্বভাব এবং বুদ্ধিদীপ্ত কথার জন্য বাড়ির সকলের কাছে তার ভীষন জনপ্রিয়তা ছিল।
আমি ঠিক উল্টো।
জেন্না আমার নাম দিয়েছিল “ধানি লঙ্কা”।
রাগ, তেজ এবং কান্নাকাটির কারণে সবাই আমাকে ভয় পেত, তাই সম্মান জনক দূরত্ব বজায় রাখতো।
জেজাউপ আমাদের দুজনকেই খুব ভালো বাসতেন, তবে তাঁর অত্যন্ত প্রিয় পাত্র ছিল আমার দাদা
” মানিক চাঁদ”।
জেজাউপ, আমার জ্যেঠামশাই, স্বর্গীয় শিশির ব্যানার্জী এই মহেশতলায় একসময়ের অত্যন্ত পরিচিত এবং সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব।
মানুষটি একদম সাধারণ ঘরের ছেলে হয়েও কেবলমাত্র নিজের সততা এবং পরিশ্রম কে মূলধন করে জীবনে অনেক সাফল্য অর্জন করেছিলেন।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক সাধারণ মানুষের উপকার ও সাহায্য করে গেছেন নিঃস্বার্থ ভাবে।

১৯৭৭ সাল।

আমাদের পাড়ায় এবং আমাদের বাড়িতে প্রথম টেলিভিশন এল। “ভারত টিভি” কিনে আনলেন জ্যাজাউপ।
পাড়ার মানুষ সন্ধ্যায় টিভি দেখতে আসতো আমাদের বাড়িতে।
মনে আছে “পল্লিকথা” বলে একটা অনুষ্ঠান হতো সন্ধ্যায়। সাদামাটা অনুষ্ঠান।
তাই দেখতে সকলের কি উৎসাহ!
মানুষ গুলো বাতাসে ভেসে টিভি র বাক্সে ঢুকে বসে বসে কথা বলছে!
ছোটবেলার সে এক মহা বিস্ময় ছিল আমার কাছে।
বার বার টেলিভিশন বাক্সের পিছনে গিয়ে দেখতাম কেউ সত্যি বসে আছে কি না।

মনে পড়ে, উষার মাঠে খেলোয়াড়দের দল মনমরা হয়ে বসে আছে।
ফুটবল নেই কয়েকদিন হলো। ফেটে গেছে।
চাঁদা তোলা, বল কেনা এই সব আলোচনার মধ্যে
যেযাউপ অফিস ফেরত ফিয়েট গাড়ি থেকে নামলেন মাঠের একপাশে। দুই হাতে দুটো ফুটবল ছুঁড়ে দিলেন মাঠে। ছেলেদের দল মহাখুশি।

বাড়ি টা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ভরে দিয়েছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় জ্যাঠামশাই।।
আনন্দ বাজার পত্রিকা নেওয়া হতো।
আমার বাবা দেশ পত্রিকা নিতেন।

এ ছাড়াও ছোটদের জন্য ইন্দ্রজাল কমিকস এর বেতাল,ম্যানড্রেক, বাহাদুর, আনন্দমেলা।
বড়দের এবং বাড়ির মহিলাদের জন্য বিশেষ করে আনন্দলোক, রোমাঞ্চ আরও কত কি।
অফিস থেকে ফিরে সন্ধ্যায় বাইরের ঘরে বসে উনি বিভিন্ন বই পড়তেন। কখনো আমাদের পড়ে শোনাতেন।
ইন্দিরা গান্ধীর বড় ছবি ছিল সেই ঘরের দক্ষিণ দেওয়ালে। জ্যাজাউপ ইন্দিরা গান্ধীর ভীষন ভক্ত।

মনে আছে ৮৪ সালে যেদিন ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর খবর রেড়িয়োয় বাজছে জেজাউপ বাইরের ঘরের আরাম কেদারায় বসে আছেন নির্বাক!
মাঝে মাঝে বলছেন ” যাহ্ সব শেষ হয়ে গেল!
দেশ টা শেষ হয়ে গেল”
আমার তখন কতোই বা বয়স!
জেজাউপের সেই কথা শুনে মনে হতো, সত্যি ই কি আগামীকাল থেকে আর দেশ টা ঠিক মতো চলতে পারবে না! কি হবে তবে!

তিরিশ বছর পরেও দেখছি দেশটা বেমালুম চলছে,কিন্তু আমার জ্যাজাউপ চলে গেছেন
মানিক চাঁদের কাছে, অনেক বছর আগেই, অনেক অনেক ভালবাসা আর স্মৃতি ছড়িয়ে।
জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে….