শুভজিৎ বন্দোপাধ্যায়
আমার পা এ ব্যথা। স্ত্রীর ও পা আর পা- হাড় ভীতি।
ছেলেরা নাছোড়বান্দা। অগত্যা দালাল ধরে দার্জিলিং মেল চড়ে ফজলিআমের দেশ পেরিয়ে রাতকাবারে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় হাজির শিলিগুড়ি।
মে মাস শেষ।
“এবার বিবাহবার্ষিকী টা তা হলে পাহাড়েই, কি বল?”
শ্রীমতি মুখ গম্ভীর।
ট্রেকার যেই ষাট ডিগ্রি তে আর একটা পাক মারলো উনি ঘাড় লটকে আমার কাঁধে মাথা রাখলেন। মাথা ঘুরছে।
ছেলেরা ও এক ই অবস্থা।
আমি ক্যাপ্টেন “কেলুচরন”। একা চোখ খুলে বসে আছি।
বুকের ভেতর কেমন যেন একটা সাহস এলো। ভয় কে জয় করতে হবে।
অবশেষে ম্যালের গোড়ায় থামলো গাড়ি।
কলকাতার বীরের দল নেমেই বলে “উরিবাবা কি ঠান্ডা”
হোটেলের ছেলে টি জিনিসপত্র মাথায় নিয়ে খাড়া পথে তরতরিয়ে উঠছে। পিছনে আমার বড়ছেলে তার পিছনে ছোট জন। বৌ তো রাস্তায় বসে পড়ে আর কি।
“এ বাবা, তুমি কি বেড়াতে না মারতে এনেছো?”
উপায় নেই। যেতেই হবে। অগত্যা ….
চাপের নাম বাপ।
তিনটি দিন কি ভাবে ফুরিয়ে গেল!!
ভুলে ই গিয়েছিলাম ফিরতে হবে আবার সেই কলকাতার ফার্নেসে।
দেখেছি এক বৃদ্ধ মানুষ পিঠে গ্যাস সিলিন্ডার, তার উপর প্রায় একবস্তা আলু নিয়ে ঐ ঢালু পিছল পথে পাহাড়ের রাস্তায় চলেছে।
পিঠে বোঝা, তবু মুখে সরল হাসি। যেন কতকালের চেনা।
ওর সাথে চলতে চলতে নেমে ছিলাম অনেক নীচে, আবার উঠেও এসেছিলাম হাতে এক অচেনা সুন্দরী ফুলের থোকা নিয়ে।
হোটেলের ঘরে ঘুম ভাঙিয়ে বউ কে বললাম”শুভ বিবাহ বার্ষিকী” হাতে সেই ফুলের থোকা। দারুন রোমান্টিক একটা সকাল।
পর্দা সরানো জানলার পাশে চুপটি করে দাঁড়িয়ে হাসছে ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা।
ফেরার পর আমার পায়েরব্যথা একদম গায়েব!!!
সবই মনের ব্যাপার। তাই না??