শিউলি কথা
শুভজিৎ বন্দোপাধ্যায়
গাছটি আমাদের পুকুর ঘাটের পাশে বসিয়েছিলেন।
ছোটবেলার থেকেই বহুবার শুনেছি
” এই গাছটি তোর বয়সী”।
মা এই কথাটা বলে কোথাও একটা মানসিক তৃপ্তি
অনুভব করতেন। ছোটবেলার তা না বুঝলেও পরবর্তী তে বুঝতে পারতাম।
গাছের একটা ডাল ছেঁটে ফেলতে হলেও মা’এর অনেক আপত্তি। শুওপোকা হয়েছিল বলে একবার গাছের গোড়ায় আগুন জ্বালিয়েছিলাম।
কিছুটা গাছ ঝলসে গিয়েছিল।
মা কয়েকদিন আমার সাথে কথাই বলেননি।
সারাবছর কমবেশী ফুল ফুটতো সেই গাছে।
তবে পূজার সময় ফুলেফুলে সাদা হয়ে যেত সেই গাছ।
লক্ষ্মীপূর্নীমার রাতে ঐ গাছের মাথায় চাঁদ আসতো!
সে এক অপূর্ব দৃশ্য। অসাধারণ অনুভূতি।
মা চলে যাওয়ার পর গাছটাও নষ্ট হয়ে গেছে আস্তে আস্তে।
আমি ও আর সময় পাইনা এই সব দেখাশোনা করতে।
ঐ গাছের ই একটা চারা গতবছর উঠোনে এনে বসিয়েছিলাম।
আজ অষ্টমীর সকালে দেখলাম তিনটে ফুল গাছে, আর তিনটে মাটিতে শিশির মেখে শুয়ে আছে।
গতকাল ই আমার সহধর্মিণী আমাকে দেখিয়েছে যে গাছে ফুলের কুঁড়ি হয়েছে। তা না হলে এই ফুল ও হয়তো আজ আমার নজরে আসতো না।
চশমা দিয়ে সারাদিন অর্থকরী জিনিস পত্র দেখতে দেখতে দৃষ্টি টা ই ঘোলাটে হয়ে গেছে।
কিন্তু প্রকৃতি তার কর্তব্য ভোলেনি।
আমার মায়ের মত আগলে রেখেছে আমার বসানো ছোট্ট শিউলিকে, শুভ অষ্টমীর সকালে আমাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য।