সন্ন্যাসী রাজা।
শুভজিৎ বন্দোপাধ্যায়
তখন আমার ছ-সাত বছর বয়স। জেঠুর বাড়ি খড্গপুর গিয়ে এক টা মাস ছিলাম।
ভাড়া বাড়িতে জেঠু জেঠিমা থাকতেন।
শীতের সকালে ঘুম চোখে “বড় বাথরুমে” ঢুকে বসেছি।
হঠাৎ নীচের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা হাত।
আমি তো এক লাফে ঘরে।
ভয়ঙ্কর ভয় পেয়েছিলাম। জেঠিমা বললেন কি ব্যাপার? কি হলো?
আমি বললাম নীচে একটা মানুষের হাত!
আরে এটা তো খাটা পায়খানা। ওরা সকালে ময়লা পরিষ্কার করতে আসে।
তোমাদের বাড়ির মত ব্যবস্থা এখানে নেই।
আমার জীবনে সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।
এমন ই আরও একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেইবারে খড্গপুর থাকার সময়।
এক রবিবার দুপুরে ভোজনের পর জেঠু জেঠিমা ভালো জামাকাপড় পরে তৈরি।
আমি আর টুনি দিদি তখন বাইরের বারান্দায় গঙ্গারামের সাথে কথা বলছিলাম।
গঙ্গারাম একটা বড় লেজ ওলা তোতা পাখি।
সব কথা বলতে পারতো। আমার জেঠিমার পোষা পাখি। আদরের নাম “গঙ্গারাম”!
জেঠু বললেন মোহন চাঁদ পোশাক পরে নাও, আমরা সিনেমা দেখতে যাব।
সিনেমা!! সে তো নোংরা অপরিস্কার বাড়ি। তার ভীতরে আবর্জনা ফেলা হয়।
কে বললো এই সব??
আসলে আমার মা জেঠীমা’দের একটা দল ছুটির দিন দুপুরের খাবার পর কখনো কখনো ইন্দ্রধনু সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতেন।
আমি অনেক ছোট। চার পাঁচ বছর তখন। খুব বায়না। কান্নাকাটি। আমি ও যাবো।
তখন আমার বাবা আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বুঝিয়ে ছিলেন, ঐ সিনেমা হল নোংরা অপরিস্কার আর আবর্জনা ভর্তি হয়ে থাকে। ওখানে ছোট রা কেউ যায় না।
সেই কথাই মনে ছিল।
সেই বিশ্বাস দূর হলো খড়্গপুরের সিনেমা হলে গিয়ে। জীবনের প্রথম সিনেমা দেখলাম ছয় সাত বছর বয়সে “সন্ন্যাসীরাজা”
উত্তমকুমার।
কে উত্তম কে অধম তখন কিছুই বুঝতে পারিনি। সেই বয়সে অন্ধকার ঘরে তিনটি ঘন্টা বসে থাকা আমার মতো দুরন্ত ছটফটে ছেলের পক্ষে কি যে কষ্টকর সে আমিই জানি।
পর্দায় সিনেমা চলছে আর আমার চোখ অন্ধকারে খুঁজে বেড়াচ্ছে কোথায় আবর্জনা আর নোংরা নর্দমা। বাবা যে বলেছিলেন!!
তখন অন্ধকারেও পরিষ্কার দেখতে পেতাম।
এখন চশমা পরে আলোর মেলায় থেকে ও
মাঝেমাঝে সব কেমন ঝাপসা মনে হয়।
পরবর্তী কালে পূর্ণ সিনেমা হলে ঐ সন্ন্যাসীরাজা আবার দেখেছি। ভাল লেগেছে। উত্তমের কোন ছবিই বোধহয় আমার বাদ যায়নি।
বুঝতে পেরেছে উত্তমকুমার কি, অভিনয় কি জিনিষ। বাঙালীর হৃদয় জুড়ে আজ ও কেন শুধু উত্তম আর উত্তম!! এ কি শুধুই আবেগ না তার চেয়েও আরও অনেক অনেক বেশি কিছু…
ভাবনা ভাসুক বাতাসে…