ভাবলাম অনেক কিছুই
শুভজিৎ বন্দোপাধ্যায়
ভাবলাম অনেক কিছুই, কিন্তু করলাম সামান্য ই।
ভাবতে ভাবতে ই জীবন কেটে গেল।
ছোট বেলা বলতো ভাবিস্ না কেন??
বুড়ো বেলা বলে, এত ভাবনা কেন!!
“ভালোবাসা” ভেবে যে সমস্তর পিছনে ছুটলাম তারা কেউ ফিরে ও তাকালো না….
আর একদম’ই না পসন্দ গুলো আমার পিছন ছাড়ে না- যেমন এই প্রথাগত “লেখা পড়া”।
সেই ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ায় আমার ভীষন কষ্ট, তবুও উপায় নেই- বাবা’র ধোলাই এর ভয়।
মাষ্টার মশাই এর ছেলে গাধা হবে, ছি!
তাই বাবার মান রাখতে জান কবুল করে বইএর দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে ফেললাম জীবনের বিশ টা বছর।
তার পর চাকরির কুকুর দৌড়!!
এর মাঝে, কখনো মন টা উড়ুউড়ু হলো, কিন্তু আবার ও সেই মা-বাবার মুখ, পরিবারের মান-সন্মান।
বাঁধন ছিঁড়ে আরকিছু করাই হল না। এমনকি একটা লটারির টিকিট কেটে হঠাৎ বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন টাও দেখলাম না কখনো।
ছোটবেলার, একবার বাড়ির সামনের রাস্তায় একশো টাকার নোট একটা কুড়িয়ে পেয়ে বাবা’র হাতে এনে দিলাম।
বাবা বাড়িসুদ্ধু লোক কে জিজ্ঞেস করলেন। অবশেষে সেজকাকা সেই টাকাটা নিয়ে গেল।
তার কোমরে গুজে রেখেছিলেন, পড়ে গিয়েছিল কোন ভাবে।
এর বদলে একটা চকলেট ও পেলাম না।
সব ই আমার কপাল!!
যার কেউ নেই তার কবিতা আছে। গান আছে।
কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে…
আমার জীবনের সেই পাগল করা কল্পনার প্রেমিক চরিত্রটি হলেন ” দাড়ি-বুড়ো”।
ছোট বেলা থেকেই বাবাকে দেখতাম রবীন্দ্রনাথ পড়তে, রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে এবং গুনগুন করে গাইতে!!!
বাবার একটাই কথা, এখন পড়ো, পরে বুঝতে পারবে।
ভাবতাম এ আবার কি উদ্ভট কথা!!
বাবা আজ আর নেই।
অনেকের বাবা ই তার সন্তান দের অনেক কিছু দিয়ে যান। “ধন-সম্পদ” যাকে বলে।
একদিন যার শেষ হয় বা value depreciate ও হতে পারে।
আমার বাবা আমাকে উপহার দিয়ে গেছেন তাঁর রবীন্দ্রানুরাগ।
এ অমূল্য সম্পদের খয় নেই, লয় নেই….. সুখে, দুখে, জীবনে-মরণে সব সময়,সব মুহূর্তে এ এক আশ্চর্য প্রানের শান্তি… মনের আরাম।
আমার একান্ত ইচ্ছা, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের গান ও সাহিত্যের প্রতি আমার এই ভালোবাসা, এই রবীন্দ্রানুরাগের পাগলামি থেকে আমি যেন এক মুহুর্ত ও মুক্তি না পাই। অমিতের লাবণ্য, কাবুলীওয়ালার মিনি…
“আমি তোমার ই বিরহে রহিবো বিলীন-তোমাতে করিব বাস”
এমন ই সব গান গল্প কবিতার মাঝেই আমি হারিয়ে যেতে চাই শিশিরের শব্দের মতো আনন্দ থেকে মহানন্দলোকে।
স্বপ্নের সেই পথ..
হতে চায় না তো শেষ..
তবু থেমে যায় কোনো বাঁকে…
ছায়াটুকু তার স্মৃতির পাতায়
সোনালী হরফে রেখে।
পরিচয় হয় নিত্য নতুনে
তোমাকে ই মাঝে রেখে
কর্মে বাঁধা এ চরাচর জুড়ে
ধীরে সরে যেতে যেতে।
Well Said.
ধন্যবাদ