গাছপালা
শুভজিৎ বন্দোপাধ্যায়
জীবনের চলার পথে আমি আমার কয়েকজন বিশেষ পরিচিতি মানুষের জীবন যাপন পদ্ধতির কিছু কিছু অংশ অনুসরণের চেষ্টা করি।
বাবার অনুপস্থিতিতে এই রকম গুটিকয়েক মানুষ আমার বাঁচার প্রেরনা, লড়াইয়ের হাতিয়ার।
নিজের অজান্তেই কখন কার থেকে যে কি চুরি করি সেটা বলতে পারি না।
আমার এই ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলা লেখার অভ্যাস ও সেই অনুপ্রেরণার ই ফসল।
আমার অফিস কাজের বাইরেও অন্য কিছু, অন্য কোন ভালো লাগার কাজ করার জন্য সময় বের করে নিই।
কখনো বেসুরো গলায় গান গাই। গান শুনি নিজের পছন্দের গান, এক ই গান বারবার। লতা, সন্ধ্যা,বাপ্পি লাহিড়ী র জন্য চোখের জল মুছি!
নিজের পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে মাঝে মাঝেই ফোনালাপ করি কোন দরকার ছাড়াই।
এসব ই এককথায় “ঝাড়া”।
কিন্তু আমার নিজের মতো করেই সাজিয়ে নেওয়া।
সংসারের দায় দায়িত্বর সাথে সাথেই এগুলো ও চলতে থাকে অনিয়মিত অবহেলায়।
অনেক অযত্ন সহ্য করেও লঙ্কা গাছটাতে যখন দুটো লঙ্কা ঝুলতে দেখি সে খুশি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
অনেক অবহেলায় ছড়ানো দোপাটি ফুলের দানা থেকে যখন কয়েক টা মাত্র গাছ বিশাল আকার ধারণ করে সাদা,বেগুনী হলুদ ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের ফুলে ভরে যায় যখন, কি অদ্ভুত খুশীর সকাল বলা যায় না।
মনে হয় ঈশ্বরের বাগান।
লাউয়ের ডগা যখন সাদা ফুল মাথায় নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে “আমাকে দেখো”
আমি সত্যিই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি!!
ছোট ছোট ওলকপি চারা গুলো কেবলমাত্র একটু জল খেতে চায়। জল পেলেই খুশিতে তাদের পাতাগুলো ঝকঝকে হয়ে ওঠে।
বালিকা থেকে হঠাৎ কখন তারা যুবতী হয়ে যায়।
কাস্তের টানে গোড়া কাটতে বুকের ভেতর টা খচখচ করে, কিন্তু নিরুপায়।
সময় মতো পাত্রস্থ করতে না পারলে পোকা মাকড় নষ্ট করে দেবে তাকে।
প্রকৃতি আর মানুষ তো আলাদা নয়।
একটা দানা যদি গাছ হয় তাহলে সে অবশ্যই কিছু দিয়ে যেতে চেষ্টা করে।
মানুষ বেইমানি করলেও গাছপালা করে না।
নিঃশর্ত ভালবাসা, নিঃস্বার্থ ভালবাসার অপর নাম প্রকৃতিপ্রেম- যার শেষ নেই।
ফুল, লতা, পাতা এরা কথা বলে না, কিন্তু ঠান্ডা বাতাস হয়ে বুঝিয়ে দেয়, “এইতো তোমার পাশেই আছি”।
ভালোবাসা নাই বা হলো, ভালোলাগায় তো কোন বাধা নেই।
আমার এই ভাললাগা তেই আনন্দ।